জীবনজল যৌনজল : অনুপম মুখোপাধ্যায়



।।১টি পুনরাধুনিক কবিতা।। 
কোথায় পালক আর কোথায় যে ডানা 
রাষ্ট্র ফেলে শেষমেশ দেশ নেবে নাকি
বেলোয়ারী চুড়ি হয়। জানালাও হয়
হৃদয়ে পাখির চোখ। পরিচয়। নখ
ধোঁয়া ভালবেসে ঘরে চিমনি রেখেছ
শীতের পরোয়া তুমি অত তো করো না
ঘরের বাহিরে যাও। যাও যাও। যাও
দ্যাখো। আজ আগাছায় বাহার লেগেছে
ঘরের পেছনে শুয়ে ভালো কালো রোদ
পিঠ যথা কেঁদে কেঁদে বেঁকে যায় কারো
মেথরের সিঁড়িটিতে মরিচা পড়েছে
পাতাবাহারের ধুলো জল দাও প্রিয়
অভ্যাস যে বিষাদের আরেক নাম। জানো
কবিতা লেখো তো লেখো। ছাপতে চাও কেন
ওই মূঢ় জনগণ। কূট ও কুটুমে
শোনো। ওরা সূক্ষ্মতার ধারও তো ধারে না
করাত চালায় নাকি বেহালা বাজায়
ভোর। নাকি বেলাশেষ। কিছুই খোঁজে না
হুদাই লাফাও তুমি মানুষ মানুষ
তোমার মনের কাচ। পৃথিবী ভেঙেছে
কতখানি ফাঁস ছিল। কতটা যে টান
শুধু তো তুমিই জানো। আর কেউ নয়
মিছিলের ফাঁকে দ্যাখো অরবের দাগ
নীরবের দীপ্র রাগ চুপের আবেগ
পাখিপোষা লোকগুলো হুশ ইট রেখে গ্যাছে
লাইনে রয়েছে বটে। সমবায়ী নয়
পুড়ে গিয়ে কেঁদে ওঠে দেবতারা পারে
পোড়া আর বেঁচে থাকা মানুষের। ধাত
সবুজের গ্রাম। ঘর। সকালের আলো
সঠিক সময়ে। ঠিকপাতা ঝরে যায়
পাতা তো খসেছে। যাতে হাওয়া তাকে পায়
হাওয়া তাকে খেয়ে নেয় নিজের হলুদে


🍂
১ গাছ রূপ মাখে অনেক গাছের
সারাদিন। রোদ নেয়টানা রোদ

তোমার চোখের গাছ আমার হবে না
আমি বুঝি গাছ হয়ে গাছ দ্যাখা হয়
আমি দেখি। নদীহীন মানুষের বালি
ঠিক কত ব্যাঙ পেলে সাপ পোষা যায়
যত আটা পেলে কিছু রুটি সেঁকা যায়
টাকার শরীরে থাকে ততটা কাগজ
রুটি ফেলে বই কেনে। এমনও মানুষ
দেবতা তো নয় তারা। নেহাৎ রসিক
কাগজে যে মিশে থাকে গাছের বিলাপ
অনেকেই। ল্যাপটপে কবিতা লেখে না
কাগজে তামাক পোড়ে। সিগারেট 🚬 নাম
পাতাপোড়া বিড়িদের জাতকূল নেই
ভেজালের ভয়ে তুমি খাবার তামাক কেনো না
এ ক্যামোন আচরণ শেখো। অনুপম
এখানে লরিতে চেপে। কারুকাজ আসে
ভাড়া। গুনে দিতে হয় তারিখ হিসেবে
প্রেমের পূজারী তুমি। বোকাচোদা কবি
তাহলে কী করে অ্যাত গৃহদাহ করো
তোমার যা পরকীয়া। অন্যের জীবনে
স্বর্গের প্রোটিন নয়। স্পার্মব্যাংক ছিল
যে ঘরে লেগেছে গাঢ় আগুনের দাগ
ধোঁয়ার ঈশারা নিয়ে সেখানে সে আছে
ফুলের নিঃশ্বাস। থেকে রং চুরি করো
বৌয়ের শরীরে। যথা। বান্ধবীর ডোর দ্বার door
শরীরে এল না সে তো। দেহে খুব আসে
পরণে চিকন শাড়ি। চোখেমণি নেই
কুয়াশার মহিলাকে। ওভারটেক করি
ঠাণ্ডা সে। হাইওয়ে। কালো। ও কঠিন
যে মেয়েরা নদীপাড়ে হেগে এসেছিল
যে ছেলেটা সভয়ে তা দেখে ফেলেছিল
নদীজলে বাঁড়া ধোয় আজ ১ লোক
গুদ তাকে কী যে দেবে ভালো কি বাসিবে
মন্দিরের পাশে ওই। হাড়কাটা গলি
সামাজিক ফুল হাড় নিয়ে ছুটেছে পুরুত
ছোট গাড়ি ছুটে গেলে ব্রিজ কেঁপে যায়
নদী তো মুখিয়ে থাকে। ইটভাটা খাবে
মানুষ পালিয়েছিল। গ্রামপড়ে ছিল
হাজার ১০০০ বছর পরে খুঁজে পাওয়া গেল
নদী গেলে দুঃখ হয় শিশুশ্রমিকের
তার বাবা মাল খেয়ে মুখ ধোবে কই
বীজধানে শেষমেশ ক্রেডিট দিল না
ব্রেন ভালো। লাংস ভালো। রোদ আরো ভালো
রোদ চোদেসাঙ্ঘাতিককারেন্সির চেয়ে
ব্যাংক ফুঁড়ে ঢুকে যায়। পোয়াতি করেছে
রোদ ⏭ রোদ ⏭ রোদ ⏭ রোদ রোদ চাই প্রিয়
খ্যাতি নয়। যশ নয়। আলোর সুনাম
বসন্তে যে লাল হাওয়া থৈ থৈ করে
এসো তার দই হই। চাটার চামচ
অ্যাতটা যে হাল্কা আর আঁকাবাঁকা। লেখা
২ পাতা পেরিয়ে গেলে। ১ পাতা হয়
ছবিতে যে  রেখাগুলো। সঠিক কোরো না
খোঁজার তাহলে কিছু বাকি থাকবে না
রাষ্ট্রের খাতায় আছে কবিতার বাকি
তুমি তা ভাঙাবে বলোপাপী পাখি। অনুপম



🌈 🍷


চিত্রঋণ : দিয়েগো রিভেরা


35 comments:

  1. একটা কবিতা হিসাবে পড়লাম না, প্রত্যেক দুলাইনই সতন্ত্র কবিতা হিসাবে এনজয় করলাম

    ReplyDelete
    Replies
    1. বুঝতে পারছি না কার কমেন্ট। সেই অনামা বা অনাম্নীকে আমার ধন্যবাদ।

      Delete
  2. রুটি ফেলে বই কেনে এমনও মানুষ
    দেবতাও নই তারা নেহাৎ রসিক

    অন্যরকম স্বাদ

    ReplyDelete
  3. দুর্ধর্ষতম কবিতা পড়লাম আজ সকালেই। আজ সারাদিন আর এত ভাল কবিতা পড়ার সৌভাগ্য হবে কিনা জানি না।
    "ছোট গাড়ি। ছুটে গেলে। ব্রিজ কেপে যায়
    নদীতো মুখিয়ে থাকে। ইটভাটা খাবে "
    কি অপূর্ব লাইন , আহা ,

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ রঙ্গন। ভালোবাসা রইল।

      Delete
  4. অনুপম অনুপম বস্তুটা মিস করলাম। বাকিটা ভাল লাগলো...

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ আশফাক। হ্যাঁ, নিজের থেকে বেরোতে চাই এবার। আবার।

      Delete
  5. কোনো একদিন এথ্থেকেও ভালো লিখব আমি...হু হু

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমিও তো এর চেয়ে খারাপ লিখব প্রিয় মৌসম... হা হা

      Delete
  6. এই যে প্রতিনিয়ত নিজেকে অতিক্রম করে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা--এটি আজকাল খুব কম কবির মধ্যেই দেখা যায়। আপনার নাম না থাকলেও বোঝা যায় এটি আপনার কবিতা। ভালো লাগলো, বেশ ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ। সুখী লাগছে নিজেকে।

      Delete
  7. আমার বেশ অনুপম লাগলো কবিতাটি :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ দেবব্রত :) আমি সুখী। বিশ্বাস কর।

      Delete
  8. কবিতা পড়তে গেলে সব কবিতা ভালো লাগে কি না জানানো সম্ভব নয় । এক ঝটকায় বলা যায় বলে আমার বিশ্বাস নেই । অতি উচ্ছাস যেমন থাকে না, তেমনি নেগেটিভিটিও থাকে না । তবে কবি যদি খুব কাছের হয় তুরন্ত বলে দিই ঝক্কাস লিখেছিস ভাই । কিছু কবিতা তাই বার বার পড়তে হয় । আবিষ্কারের ও একটা নেশা থাকে । তার পরিসর ও ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে গ্রাস করে ওঠে । একটা ধারনা বা চিত্রকল্প বা ডিনামিক্স তৈরী হতে থাকে । বলা যায় একটা মতামত গড়ে ওঠে । কবির স্থান একটু একটু করে পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে থাকে । এক কথায় তাই ওয়াও বলা যায় না । যেটুকু বলা যায় এর মধ্যে একটা ভাবনা আছে, আধুনিকতা আছে , আগামীর সম্ভবনা আছে । কবিতার জন্ম দিতে দিতে কবিও একদিন কবিতা হয়ে যান । কবিতা নিয়ে শোয়া, স্নান , খাওয়া সবই চলে । এমন কবির কবিতা অনেকদিন পাঠক মনে রাখে ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ পীযুষ। কথাগুলো মূল্যবান।

      Delete
  9. চমৎকার অনুভূতিময়

    ReplyDelete
  10. তুমি যে পার হয়ে আসছ আক্রমণের রক্ষণশীলতা, এবার ভাল হবে কবিতার। সচেতনতা নষ্ট হোক। এমনি কথা বলো একা। তুমি অত্যন্ত শক্তিশালী ফিলজফার, এটা আমার পর্যবেক্ষণ।

    ReplyDelete
  11. ছবিতে যে রেখাগুলো সঠিক কোরনা/ তাহলে খোঁজার কিছু বাকি থাকবে না
    একটা একলা গলার একলা চলার একলার বলার নির্জনতা ছাপিয়ে যাওয়া নিয়ে গেল , সে খোঁজের দিকে, বরাবরের মতই---আহা

    ReplyDelete
  12. "তোমার যা পরকীয়া...বান্ধবীর door" এটুকু অংশ আমাকে খুব টেনেছে।
    এই কবিতার প্রথম ভাগে নোট-বন্দি ছাপ ফেলেছে। যা, আরেকটু 'পরিপাক' হয়ে এলে আমার ভালো লাগত।
    শেষ অংশটা যেন কবির ক্লান্তি ধরিয়ে দেয়। ...অনুপমের থেকে অনুপম বেরোতে চেয়েছেন কিছু জাগায়, তার চিহ্ন আছে; যা আগেকার অনুপমকে এগিয়ে দেয় না। ...আর অনুপমীয় 'মজা' খাঁজে-খাঁজে, বেশ ভালোমতোই, এখানেওঃ নিরাশ না হবার পক্ষে সেটুকুই অনেক। ...কবির যাত্রা ও খোঁজ কে বাহবা যানাই।

    ReplyDelete
  13. জীবনজল যৌনজল কবিতার নির্মাণশৈলী আমাকে আকর্ষণ করেছে । কিছু কিছু শব্দ প্রয়োগ কবিতাকে অযথা ভারী করে তুললেও কবিতাটি শেষ পর্যন্ত খাটি সোনা হিসাবে প্রতিফলিত , এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । তবে মৌলিক কিনা সে বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আন্তরিক ধন্যবাদ। বিতর্কটা আপনিই শুরু করুন। তার চেয়ে স্বাস্থ্যকর আর কী হয় একজন কবির পক্ষে। প্রয়োজনে আমিও অংশ নিতে পারি। প্রশ্ন ভালোবাসি আমি।

      Delete
  14. কতখানি ফাঁস ছিল ...... আর কেউ নয়, আমি দেখি........ সাপ পোষা যায়, সব শেষ খ্যাতি নয় যশ নয় আলোর সুনাম,
    এই লাইন গুলোয় থেকে যেতে ইচ্ছে করছিল। আর খুব সত্যি কথা প্রতি ২ লাইনেই ১ টি কবিতা খুঁজে পাওয়া গেল। উপভোগ করলাম।

    ReplyDelete
  15. কল্পনার সূত আর মহাভারত নিয়ে লেখাগুলোর মতো এই কবিতাগুলোও অনেকদিন ফুরিয়ে ওঠা যাবে না বেশ বুঝতে পারছি...

    ReplyDelete
  16. শাড়ির অসুখ হলে যতটা সে পেঁচিয়ে ধরে কোমর এটাও তেমনই যেন... দারুণ

    ReplyDelete
  17. ভেবেছিলুম, পুনরাধুনিকে বোধহয় বাঁকবদল সম্ভব নয় । বাঁকবদল ঘটিয়ে ফেলেছ, তাছাড়া ভেতরে ভেতরে দুটি লাইনের মন্হন ঘটিয়ে অমৃত আর বিষের সমন্বয় ঘটিয়ে ফেলেছ । বহুত খুব, বহুত খুব ।

    ReplyDelete
  18. দুর্ধর্ষ কবিতা লিখেছ ,অনুপম । চমকানো প্রচ্ছদ । শরীরে এল না সে তো দেহে খুব আসে --ওঃ ।কথা হবে না ।

    ReplyDelete