হুব্বা কবিতা : সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়



হাওয়ামেঘের কলকাতা

হাওয়ামেঘের কলকাতা বিকিনির মতো সরল নয়
আরেকটু জটিল বিষয়.....

মুখ, কোথা থেকে ভেসে এসে
কোথায় চলে যায়
পর্দা , কেন এলোমেলো উড়ে চলে বোবা ছায়াঘরে -
এ সব প্রশ্নে কোনো ঢেউ নেই, বিকিনি-বিকেল নেই

হাওয়ামেঘের কলকাতা
সেতুর ওপরে একা হেঁটে যাওয়া লোক
যার মুখে টর্চ ফেলে লাভ নেই

সে শপিং মলের মত সরল নয়
হারানো ট্রামের মতো, আরেকটু জটিল বিষয়.....


চিঠি দিও

লোকটাক লেকের ধরে শুয়ে আছি লক্ষ বছর।
উপত্যকার ফুল দুলে ওঠে জিপসি-হাওয়ায়।
নীল পাহাড়ের কোলে গান গেয়ে ভেসে যাওয়া
টানাচোখ মনিপুরী মেয়ে,
আমি চাই
রাক্ষুসে বাইকের খাড়াচুল বয়ফ্রেন্ড ছেড়ে
তুমি চলে যাও মেঘের আড়ালে।
শহরে ফিরে যাব, যেমন ফিরে যেতে হয়।
শহরে মরে যাব , যেভাবে জুতোর তলায় মরে পোকা।
তুমি শুধু টুকটাক চিঠি দিও, বর্ষার দিনে।


হুব্বা কবিতা

আজ হুব্বা কবিতার দিন
এটা একটা হুব্বা কবিতা
একটা হুব্বা দেশ
একটা হুব্বা শহর
একটা হুব্বা পাড়া
হুব্বা শহরে হুব্বারাই থাকে
হুব্বা পাড়ায় হুব্বারাই থাকে
এখানে প্রতিটা বাড়ি হুব্বা
প্রতিটা ব্যালকনি হুব্বা ব্যালকনি
প্রতিটা সম্পর্কের নাম হুব্বা
প্রতিটা গাছ, প্রতিটা পাখি হুব্বা ছাড়া আর কিছু নয়
প্রতিটা হাসি হুব্বা
প্রতিটা কান্নাও হুব্বা হয়ে যাওয়া কান্না
মদের দোকানে হুব্বা লাইন, শপিং মলে হুব্বা ভীড়
ম্যাকডোনাল্ডস-এর প্রতিটা টেবিল হুব্বা
একটা হুব্বা সিনেমা দেখে বেরিয়ে
আমরা ঢুকে পড়ছি একটা হুব্বা চিড়িয়াখানায়
হুব্বা ডাক্তারের চেম্বার থেকে
কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে আসছে হুব্বা রোগী
এখানে অফিসের টেবিলে জমে ওঠে হুব্বা ফাইল
কম্পিউটার ভর্তি হয় হুব্বা হুব্বা ইমেল-এ
প্রতিটা চাকরি হুব্বা চাকরি
প্রতিটা ইন্টারভিউ হুব্বা হবার প্রস্তুতি
প্রতিটা ভিখিরি হুব্বা বলেই ভিখিরি
প্রতিটা মহাজন হুব্বা বলেই দিনরাত টাকা গুনছে
প্রতিটা পুলিশ হুব্বা, প্রতিটা চোরও হুব্বা চোর
প্রতিটা নেতা হুব্বা , আর পাবলিক আরও বেশি হুব্বা
এখানে চাঁদ হুব্বা হয়ে ঢেকে গেছে মেঘে
হুব্বা সূর্যও পুড়ে গিয়ে হয়ে গেছে ছাই
এটা একটা হুব্বা কবিতা
হুব্বাদের জন্যেই এই কবিতা
এই কবিতা যে লিখছে , সেও আপাদমস্তক একটা হুব্বা লেখক
এখানে প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত হুব্বা

তবু, প্রতিটা সদ্যজাত শিশু

আগামীকাল হুব্বা হয়ে যাবার আগে
আমরা কি সত্যিই কিছু করতে পারিনা ?


ইনকা সভ্যতা

আঙুরবাগানে শুরু হওয়া কথা
তারপর শেষ হয়ে আসে
মেঘলা বিকেলগুলো রামধনু হয়ে ওঠেনা তারপর
নিশ্চল পড়ে থাকে মোবাইল ফোন, মেসেজে কাঁপেনা
শুধু শেষ ট্রাম জোনাকির মত পার হয়ে যায় ময়দান এলাকা
একদিন কথা সব শেষ হয়ে আসে
জানলায় ভেসে থাকে নির্বাক তারাদের মুখ
পুরোনো লাইব্রেরির শেষ তাকে নিজেকে রেখে আসি আমি
যে শহরে তুমিও থাকোনা আর থাকিনা আমিও
সেখানেই আমাদের নাকি দেখা যায় -
নিজস্ব পাড়ার মোড়ে আলাদা আলাদা আলো নিয়ে
যেমন দাঁড়িয়ে থাকে বিবর্ণ দুটো ল্যাম্পপোস্ট ......

এইসব স্তব্ধ সন্ধ্যায়, আর্ট কলেজের ছেলে
ইনকা সভ্যতার ছবি আঁকে ধূসর দেওয়ালে .....


2 comments:

  1. প্রতিটি কবিতা পড়ে মুগ্ধ। তবে ইনকা সভ্যতার কাছে এসে স্তব্ধতা ঘিরে ধরল যেন। এরকম কবিতার কাছেই তো নতজানু হতে ইচ্ছে করে।কবিকে শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete
  2. প্রানবন্ত লেখনী। ভালো লাগল।

    ReplyDelete